রচনা : আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস


ভূমিকা: আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এ ভাষায় কথা বলার স্বাধীনতার জন্য
আমাদের বহু সংগ্রাম এবং জীবন দিতে হয়েছে। ভাষার জন্য এই জীবনদান
১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারিকে করেছে ইতিহাস। সেই ইতিহাসের
পরিক্রমাকে শ্রদ্ধায় সম্মানে আরও মহান করছে UNESCO’র সাধারণ
পরিষদে। ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে UNESCO’র সাধারণ পরিষদ একুশে
ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক ভাষা দিবস ’ হিসেবে ঘোষণা করে।

পটভূমি: পৃথিবীতে বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যে তার মাতৃভাষার জন্য প্রাণ
দিয়েছে। পটভুমির সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানের স্বাধীনতা লাভের পর
থেকেই। বহু ঘটনার পরিক্রমায় পরিস্থিতি কেন্দ্রীভূত হয় ২০ ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালে যখন সমগ্র ঢাকায় ১৪৪ ধারা ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ২১ ফেব্রুয়ারি
১৯৫২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় শুরু হয় সভা-মিছিল। ১৪৪
ধারা ভঙ্গ করে সভা আর মিছিলে মিছিলে ভরে গেলো পুরো বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা।
চালানো হয় গুলি এবং শহীদ হন ছালাম, রফিক, জব্বার, বরকত, শফিউর সহ
আরো অনেকে। এরই প্রেক্ষাপটে মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে সর্বদলীয় রাষ্ট্র ভাষা
পরিষদ ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে  “ভাষা দিবস” পালনের সিদ্ধান্ত নেয়।

স্বীকৃতির উদ্যোক্তা: ১৯৯৯ সালের ২৮ অক্টোবর উনেস্কোর সাধারণ পরিষদে
‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ’ ঘোষণা করার প্রস্তাবটি উত্থাপিত হয়। এ
প্রস্তাবের পক্ষে ২৭টি দেশ সমর্থন দেয়। ১৭ নভেম্বর ১৯৯৯ সালে উনেস্কোর
৩১তম সম্মেলনে “২১শে ফেব্রুয়ারি” কে “আন্তর্জাতিক মার্তভাষা দিবস ’
হিসেবে পালনের স্বীকৃতি পায়। এরই হাত ধরে আজ বাংলা ভাষা পৃথিবীর
মধুরতম ভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে।
 
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস: প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক 
মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালত হবে। বিশ্বের ১৮৮টি দেশ “১৯৫২ সালের 
২১শে ফেব্রুয়ারি” তে আমাদের মহান ভাষা আন্দোলনে শহীদদের 
প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা 
দিবস’ হিসেবে পালিত হবে। যার মাধ্যমে বিশ্বের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জাতি ও দেশসহ 
সকল জাতিই তার মাতৃভাষাকে রক্ষার ও তার ঐতিহ্য বহন করার দৃঢ় শপথে 
উদ্দীপ্ত হবে।

উপসংহার: মাতৃভাষাকে আশ্রয় করেই একটি জাতি লালিত ও বিকশিত হয়।
জাতীর ভাব, কল্পনা, আত্মার আকুলতা, ব্যাকুলতা, হৃদয়ের প্রেম ভালোবাসা
মাতৃভাষার মাধ্যমেই রূপায়িত হয়। তাই মাতৃভাষা মায়ের মত। মাতৃভাষাকে
লালনে আমাদের আরও আন্তরিক হওয়া উচিত।