[১০টি প্রশ্ন থেকে ৮টির উত্তর দিতে হবে, প্রতিটির মান- ৬]
প্রথম অধ্যায় : আমাদের পরিবেশ
১। জীব কিভাবে জড়ের ওপর নির্ভরশীল?
উত্তর : মানুষসহ অন্য সব জীব বেঁচে থাকার
জন্য বিভিন্ন জড় বস্তুর ওপর নির্ভরশীল। সব জীবের বেঁচে থাকার জন্য বায়ু, পানি ও খাদ্য প্রয়োজন।
মানুষের শ্বাস গ্রহণের জন্য বায়ু, পান করার জন্য পানি এবং
প্রয়োজনীয় পুষ্টির জন্য খাবার প্রয়োজন। ফসল ফলানো ও বাসস্থান তৈরির জন্য মানুষের
মাটি প্রয়োজন। এ ছাড়া জীবনযাপনের জন্য বাসস্থান, আসবাবপত্র,
পোশাক, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রয়োজন।
অনেক পোকামাকড়, কেঁচো ইত্যাদি মাটিতে বসবাস করে। আবার মাছ,
চিংড়ি পানিতে বাস করে। এভাবেই বেঁচে থাকার জন্য জীব জড়ের ওপর
নির্ভরশীল।
২। উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ
অপরিহার্য। এ বিস্তরণের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিভিন্ন স্থানে
বীজের ছড়িয়ে পড়াই হলো বীজের বিস্তরণ। উদ্ভিদের জন্য বীজের বিস্তরণ খুবই
গুরুত্বপূর্ণ। বীজের বিস্তরণ সঠিকভাবে না হলে উদ্ভিদের নতুন নতুন আবাস গড়ে তোলা
সম্ভব হতো না। ফলে পৃথিবীর সব স্থানে সমজাতীয় উদ্ভিদ জন্মাত। এর ফলে অন্যান্য উদ্ভিদের
পুষ্টি ব্যাহত হতো। এ ছাড়া বীজের বিস্তরণ না ঘটলে মানুষসহ অন্যান্য প্রাণীর
খাদ্যের অভাব দেখা দেবে এবং পশুপাখির আশ্রয়স্থল ধ্বংস হবে।
৩। উদ্ভিদ ও প্রাণী কিভাবে একে
অপরের ওপর নির্ভরশীল? ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণ
প্রক্রিয়ায় খাদ্য তৈরির সময় কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে ও অক্সিজেন বায়ুতে ছাড়ে।
আবার প্রাণী শ্বাসকার্যে অক্সিজেন গ্রহণ করে ও কার্বন ডাই-অক্সাইড ছাড়ে। এভাবে উদ্ভিদ
ও প্রাণী একে অপরের ওপর নির্ভরশীল।
৪। খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের মধ্যে
পার্থক্য কী?
উত্তর : খাদ্যজাল ও খাদ্যশৃঙ্খলের
মধ্যে পার্থক্য নিম্নরূপ—
৫। খাদ্যজাল কী? খাদ্যজালের ৪টি বৈশিষ্ট্য লেখো।
উত্তর : যেকোনো বাস্তুসংস্থানে অনেকগুলো
খাদ্যশৃঙ্খলের একত্রিত জালকে খাদ্যজাল বলে।
খাদ্যজালের ৪টি বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ :
i. খাদ্যজাল একাধিক
খাদ্যশৃঙ্খল নিয়ে গঠিত।
ii. একটি পরিবেশে একটি মাত্র
খাদ্যজাল থাকে।
iii. এক শৃঙ্খলের ঘাসকে অন্য
শৃঙ্খলের ছোট প্রাণী এবং ছোট প্রাণীকে বড় প্রাণী খায়।
iv. খাদ্যজালে উৎপাদক,
খাদক, বিয়োজক সবই থাকে।
৬। খাদ্যশৃঙ্খল কী? বাঘ, ঘাস, সূর্য, হরিণকে
নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলটি ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বাস্তুসংস্থানে উদ্ভিদ থেকে
প্রাণীতে শক্তি প্রবাহের ধারাবাহিক প্রক্রিয়াই হলো খাদ্যশৃঙ্খল।
বাঘ, ঘাস, সূর্য ও হরিণকে
নিয়ে গঠিত খাদ্যশৃঙ্খলটি নিম্নরূপ :
সূর্য-ঘাস-হরিণ-বাঘ
এ ক্ষেত্রে, ঘাস সূর্যের আলোর
উপস্থিতিতে নিজের খাদ্য নিজেই তৈরি করে। হরিণ সেই ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকে এবং বাঘ
আবার সেই হরিণকে খেয়ে বেঁচে থাকে। এভাবেই শক্তি সূর্য থেকে ঘাস, ঘাস থেকে হরিণ এবং হরিণ থেকে বাঘে প্রবাহিত হয়।
৭। উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে কয়েকটি
বৈসাদৃশ্য লেখো।
উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে বৈসাদৃশ্য নিচে দেওয়া
হলো :
দ্বিতীয়
অধ্যায়
পরিবেশ
দূষণ
প্রশ্ন : তোমার এলাকার পরিবেশদূষণ
রোধে তোমার বন্ধুদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাঁচটি উপায় লেখো।
উত্তর : আমার এলাকার
পরিবেশদূষণ রোধে আমার বন্ধুদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করার পাঁচটি উপায় নিচে দেওয়া
হলো—
·
পরিবেশদূষণকারী
বিভিন্ন পদার্থ যেমন—প্লাস্টিক, পলিথিন, কাচ,
রাসায়নিক পদার্থ, ধাতব পদার্থ ইত্যাদি
সম্পর্কে তাদের অবহিত করব এবং এগুলো যেখানে-সেখানে না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলার
জন্য সচেতন করব।
·
পরিবেশদূষণের
কারণ, প্রভাব ও
প্রতিকার সম্পর্কে তাদের অবহিত করব।
·
পরিবেশ
দূষিত হলে যেসব সমস্যা তৈরি হয়, সেগুলো সম্পর্কে তাদের সঙ্গে আলোচনা করব।
·
পরিবেশ
সংরক্ষণে তাদের ভূমিকার কথা উল্লেখ করব।
·
সামাজিক
দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে তাদের সচেতন করব।
প্রশ্ন : পরিবেশ সংরক্ষণ কী? পরিবেশ সংরক্ষণ না করলে
আমরা কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হব?
উত্তর : প্রাকৃতিক সম্পদের সুরক্ষা এবং যথাযথ
ব্যবহারই হচ্ছে পরিবেশ সংরক্ষণ।
পরিবেশ সংরক্ষণ না করলে
আমরা যেসব সমস্যার সম্মুখীন হব তা হলো—
(i) আমরা বিভিন্ন ধরনের রোগ,
যেমন—ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ, পানিবাহিত রোগ, ত্বকের রোগ ইত্যাদিতে আক্রান্ত হব।
(ii) জীবজন্তুর আবাসস্থল ও খাদ্য
শৃঙ্খল ধ্বংস হয়ে আরো অনেক জীবের বিলুপ্তি হবে।
(iii) পৃথিবীর তাপমাত্রা
ক্রমশ বৃদ্ধিতে জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তন হবে।
(iv) মেরু অঞ্চলের হিমবাহ
গলে সমুদ্রের পানির উচ্চতা বেড়ে যাবে।
তৃতীয়
অধ্যায়
জীবনের
জন্য পানি
১। প্রশ্ন: কিভাবে পানি দূষিত
হয়? তোমার পুকুরের পানি দূষিত হয়েছে। এ দূষিত পানির
ক্ষতিকর দিকগুলো চারটি বাক্যে উল্লেখ করো।
উত্তর: প্রাকৃতিক পানিতে বিভিন্ন ক্ষতিকর
পদার্থ মিশে পানি দূষিত হয়।
দূষিত পানির ক্ষতিকর দিকগুলো হলো—
·
দূষিত
পানি পান করলে কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, ডায়রিয়া
প্রভৃতি রোগ দেখা যায়।
·
দূষিত
পানি পান করলে পেটের পীড়া ও চর্মরোগ দেখা দিতে পারে।
·
পানিদূষণের
ফলে পুকুর, নদী
বা জলাশয়ের মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণী মারা যেতে পারে।
·
জলজ
খাদ্যশৃঙ্খলে ব্যাঘাত ঘটবে।
২। প্রশ্ন: জলীয়বাষ্প থেকে কী
তৈরি হয়? পানিদূষণ রোধে তোমার প্রতিবেশীদের জন্য চারটি
পরামর্শ উল্লেখ করো।
উত্তর: জলীয়বাষ্প থেকে
বৃষ্টি ও শিশির তৈরি হয়। পানিদূষণ রোধে আমার প্রতিবেশীদের জন্য চারটি পরামর্শ নিচে
উল্লেখ করা
হলো—
i. পুকুর, নদী বা অন্য কোনো পানির উেস বাসনকোসন মাজা, গোসল
করা, ময়লা কাপড় কাচা, গরু-মহিষ
গোসল করানো, পাট পচানো, পায়খানা-প্রস্রাব
করা ও প্রাণীর মৃতদেহ ফেলার ফলে পানি যে দূষিত হয়,
এ ব্যাপারে তাদের সচেতন করব।
i i. পানির উত্স যেমন :
পুকুর, নলকূপ, কুয়া ইত্যাদি উঁচু
জায়গায় করতে হবে।
i i i. কৃষিকাজে অতিরিক্ত
সার ও কীটনাশক ব্যবহার করলে মাটি দূষিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানিও দূষিত হয়। তাই
তাদের জমিতে রাসায়নিকের পরিবর্তে জৈব সার ব্যবহার করতে বলব।
iv. যেসব জায়গায়
আর্সেনিক-দূষণ নেই, সেসব জায়গায় পানির কৃত্রিম উত্স তৈরি
করতে হবে।
চতুর্থ অধ্যায় : বায়ু
১।
প্রশ্ন : কী কী কারণে বায়ু দূষিত হয়?
মানুষ কিভাবে বায়ু দূষণ করছে?
উত্তর: বায়ু দূষণের
কারণগুলো নিচে উল্লেখ করা হলো—
ক. কল-কারখানা ও গাড়ির
ধোঁয়া মিশে বায়ু দূষিত হয়।
খ. রাসায়নিক পদার্থ মিশে
বায়ু দূষিত হয়।
গ. ময়লা আবর্জনা পচে
দুর্গন্ধ বায়ুতে মিশে বায়ু দূষিত হয়।
ঘ. বিষাক্ত গ্যাস ও ধূলিকণা
মিশে বায়ু দূষিত হয়।
মানুষ যেভাবে বায়ু দূষণ
করছে—
ক. জীবাশ্ম জ্বালানি পুড়িয়ে
বিষাক্ত গ্যাস সৃষ্টির মাধ্যমে।
খ. যেখানে-সেখানে ময়লা
আবর্জনা ফেলে রেখে, মলমূত্র ত্যাগ করে বায়ু দূষিত করে।
গ. ময়লা আবর্জনা পুড়িয়ে
ধোঁয়া সৃষ্টির মাধ্যমে বায়ু দূষিত করে।
২।
প্রশ্ন : বায়ু প্রবাহকে আমরা কী কী কাজে ব্যবহার করতে পারি, তা পাঁচটি বাক্যে লেখো।
উত্তর : বায়ু প্রবাহকে আমরা
যে যে কাজে ব্যবহার করতে পারি তা নিচে দেওয়া হলো।
ক. বড় চড়কা বা টারবাইন
ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উত্পাদনে বায়ুপ্রবাহকে ব্যবহার করতে পারি।
খ. হাতপাখা বা বৈদ্যুতিক
পাখার বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে শরীর ঠাণ্ডা রাখতে পারি।
গ. বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে
পালতোলা নৌকা চালাতে পারি।
ঘ. বায়ুপ্রবাহের মাধ্যমে
ভেজা কাপড় শুকাতে পারি।
ঙ. হেয়ার ড্রায়ারের
বায়ুপ্রবাহ ব্যবহার করে ভেজা চুল শুকাতে পারি।
৩। প্রশ্নঃ বায়ুর উপাদানগুলো
আমাদের বেঁচে থাকতে কিভাবে সাহায্য করে, ব্যাখ্যা করো।
উত্তর : বায়ুর প্রধান উপাদানগুলো
হলো নাইট্রোজেন, অক্সিজেন, কার্ব ডাই-অক্সাইড ও জলীয় বাষ্প।
এসব উপাদান আমাদের বেঁচে থাকতে সহায়তা করে। শ্বাস নেওয়ার সময় আমরা বায়ু থেকে
অক্সিজেন গ্রহণ করি। অক্সিজেন আমাদের গ্রহণ করা খাদ্য ভেঙে শক্তি উৎপাদন করে। এ
শক্তি আমাদের শরীরকে গরম রাখে। পানি থেকে মাছ অক্সিজেন গ্রহণ করে বেঁচে থাকে। এ
মাছ খেয়ে আমরা জীবন ধারণ করি। উদ্ভিদ বায়ু থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং
সালোক-সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে। আমরা বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদ ও
তার পাতা সবজি হিসেবে খেয়ে থাকি ও জীবন ধারণ করে বেঁচে থাকি। বায়ুর নাইট্রোজেন দ্বারা
ইউরিয়া সার প্রস্তুত করা হয়। এই ইউরিয়া উদ্ভিদের বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। আবার
নাইট্রোজেন ব্যবহার করে আমরা অনেক খাদ্য সংরক্ষণ করি। আর এভাবেই বায়ুর উপাদানগুলো
আমাদের বেঁচে থাকতে সাহায্য করে।
0 Comments