ভূমিকা: বাংলার কৃষক-মজুর-শ্রমিকের অতি আপনজন যে মানুষটি, তাঁর নাম মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী। চিরকাল নির্যাতিত, নিপীড়িত মানুষের কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছেন তিনি। মজলুম মানুষের সুখে-দুঃখে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে তাদের কথা বলেছেন। সংগ্রাম করেছেন। তাই তিনি সবার কাছে মজলুম জননেতা।

জন্ম ও শৈশব: সিরাজগঞ্জের ধানগড়া গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক পরিবারে আবদুল হামিদ খানের জন্ম ১৮৮০ সালে। তাঁর বাবার নাম হাজি শরাফত আলী খান। মায়ের নাম মোসাম্মদ মজিরন বিবি।

শিক্ষাজীবন: আবদুল হামিদ খান গ্রামের পাঠশালায় পড়াশোনা করেন  এবং ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে তার শিক্ষাজীবন শেষ করেন।

রাজনৈতিক জীবন: ১৯৪৭ সালে মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী আসাম থেকে পূর্ববাংলায় চলে আসেন। প্রথমে তিনি পূর্ব-পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ ও পরে আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক পত্রিকা প্রতিষ্ঠা ও প্রকাশ শুরু করেন। ১৯৫২ সালে রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে জড়িত থাকার কারণে তিনি গ্রেপ্তার হন। ছাড়া পাওয়ার পর ১৯৫৪ সালে সাধারণ নির্বাচনে তিনি শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সঙ্গে যুক্তফ্রন্ট গঠন করেন। এ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট বিপুল ভোটে জয়ী হয়।

ভাসানী উপাধি: ১৯২৪ সালে আসামের ধুবড়ি জেলার ভাসানচরে বাঙালি কৃষকেরা তাঁকে ভাসানচরের মওলানা তথা মওলানা ভাসানী নামে আখ্যায়িত করেন। আর তখন থেকেই তিনি হলেন মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী।

মুক্তিযুদ্ধে মওলানা ভাসানীর ভূমিকা: ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের পর থেকে দেশব্যাপী পাকিস্তানি সেনাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু হলে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়। মওলানা ভাসানীর টাঙ্গাইলের ঘরবাড়ি পাকিস্তানি সেনারা পুড়িয়ে দেয়। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার জন্য তিনি ভারতে চলে যান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তিনি প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ছিলেন।

মওলানা ভাসানীর মৃত্যু: মওলানা ভাসানী ১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর ৯৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে টাঙ্গাইল জেলার সন্তোষে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়সংলগ্ন প্রাঙ্গণে সমাহিত করা হয়।


উপসংহার: মওলানা ভাসানীর জীবন থেকে আমরা শিক্ষা পাই প্রগাঢ় স্বদেশপ্রেম, প্রগতিশীল আদর্শ ও প্রতিবাদী চেতনার। তিনি চিরকাল শ্রদ্ধায় ও ভালোবাসায় বেঁচে থাকবেন এ দেশের কোটি কোটি মানুষের হূদয়ে।