সূচনা: ‘গাছেরও প্রাণ আছে’—এই সত্য প্রমাণ করে অভিমতটি
দিয়েছিলেন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। পরবর্তী জীবনে নিজ কর্মকুশলতা ও সৃজনশীলতা
দিয়ে বাঙালি জাতিকে অত্যুচ্চ মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে গেছেন।
জন্ম ও শিক্ষা: জগদীশ চন্দ্র বসুর পৈতৃক বাড়ি বিক্রমপুরের রাঢ়িখাল গ্রামে
হলেও তিনি জন্মগ্রহণ করেন ময়মনসিংহে ১৮৫৮ সালের ৩০ নভেম্বর। বাড়িতে পড়াশোনার হাতেখড়ি।
তারপর প্রাথমিক স্কুলে এবং ময়মনসিংহ জিলা স্কুলে মাধ্যমিক ধাপ পেরিয়ে কলকাতায়
সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল থেকে ১৮৭৪ সালে কৃতিত্বের সঙ্গে প্রবেশিকা পরীক্ষায়
উত্তীর্ণ হন। কৃতিত্বের ধারাবাহিকতায় ১৮৭৮ সালে এফএ এবং ১৮৮০ সালে বিজ্ঞান শাখায়
বিএ পাস করে বিলেতে যান ডাক্তারি পড়তে।
কর্মজীবন:
বিলেতে এক বছর ডাক্তারি পড়ার পর ১৮৮১ সালে কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন।
সেখান থেকে ‘ট্রাইপস্’
পাশ করে লন্ডন থেকে বিএসসি পাস করেন। ১৮৮৫ সালে দেশে ফিরে
কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজে পদার্থবিজ্ঞানের অধ্যাপক পদে যোগ দেন।
গবেষণাকর্ম: জগদীশ চন্দ্র বসু নানা বিষয়ে গবেষণা করেছেন। তবে ‘গাছেরও প্রাণ আছে’—এই
সত্য প্রমাণ তাঁকে বেশি পরিচিতি এনে দিয়েছে। লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে
তাঁর গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হয় এবং লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি
প্রদান করে।
আবিষ্কার: তাঁর আবিষ্কারের মধ্যে গাছ বেড়ে ওঠা
মাপার যন্ত্র ক্রেস্কোগ্রাফ, গাছের উত্তেজনা মাপার রিজোনাস্ট রেকর্ডার অন্যতম। এছাড়া অতিক্ষুদ্র
বেতার তরঙ্গ আবিষ্কার করে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন।
স্বীকৃতি,
উপাধি ও কৃতিত্ব: ১৮৯৮ সালে তাঁর ‘বিদ্যুত্ চুম্বকীয় তরঙ্গ’ গবেষণা শীর্ষক
বক্তৃতা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। এমন নির্ভুল পরীক্ষা আগে দেখা যায়নি বলে বিভিন্ন বিজ্ঞানী
মন্তব্য করেন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, ‘জগদীশ
চন্দ্র বসুর প্রত্যেকটি আবিষ্কার বিজ্ঞান জগতে এক একটি বিজয়স্তম্ভ।’ ১৯১৫ সালে ব্রিটিশ ভারত সরকার তাঁকে ‘নাইট’
উপাধি দেয়। ১৯১৬ সালে অধ্যাপনা থেকে অবসর গ্রহণ করে জগদীশ
চন্দ্র ‘বসু বিজ্ঞান মন্দির’ প্রতিষ্ঠা
করেন। ১৯২৭ সালে ডেইলি এক্সপ্রেস-এ তাঁকে গ্যালিলিও, নিউটনের
সমকক্ষ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে ডিএসসি ডিগ্রি প্রদান
করে।
মৃত্যু:
তিনি ১৯৩৭ সালের ২৩ নভেম্বর ভারতের গিরিডিতে মারা যান।
উপসংহার:
এই মহান বিজ্ঞানী বাঙালি জাতির গৌরব ও অহংকার। তাঁর রেখে যাওয়া কৃতিত্বকে হূদয়ে
ও কাজে ধারণ করে এগিয়ে যেতে হবে আমাদের।
0 Comments