ভূমিকা
: বাংলাদেশের দক্ষিণে রয়েছে প্রকৃতির অপার সম্ভার সুন্দর বন। সমুদ্রের
কোল ঘেঁষে গড়ে উঠেছে এই বিশাল বন। এখানে রয়েছে যেমন প্রচুর গাছপালা, কেওড়া ও সুন্দরী গাছের বন, তেমনি রয়েছে নানা
প্রাণী, জীবজন্তু। এটি পৃথিবীর একক বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন।
আয়তন
ও অবস্থান :
সুন্দরবনের আয়তন ৬০১৭ বর্গকিলোমিটার। এর ৬২ শতাংশ বাংলাদেশের
খুলনা জেলায় এবং ৩৮ শতাংশ পশ্চিমবঙ্গের চব্বিশ পরগনা জেলায় অবস্থিত।
সুন্দরবনের
প্রাণী :
বিচিত্র সব প্রাণীর বাস সুন্দরবনে। এ বনে প্রায় ৫০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৫০ প্রজাতীর
সরীসৃপ, ৩২০ প্রজাতির পাখি, ৮
প্রজাতির উভচর প্রাণী এবং ৪০০ প্রজাতির মাছ রয়েছে।
বাঘ
:
এ বনের প্রাণীদের মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগার পৃথিবীর বিখ্যাত। বাংলাদেশের নামের
সঙ্গে এ বাঘের নাম জড়িয়ে আছে। সুন্দরবনের বাঘ দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি আবার
ভয়ংকর। এর চালচলনও রাজার মতো। সুন্দরবনের ভেজা স্যাঁতসেঁতে গোলপাতার বনে এ বাঘ
ঘুরে বেড়ায়; শিকার করে জীবজন্তু, সুযোগ পেলে মানুষও খায়। এ সময় সুন্দরবনে ছিল চিতাবাঘ ও ওলবাঘ। এখন আর
এসব বাঘ দেখা যায় না। প্রাণীবিদরা বলেছেন, সুন্দরবনের
রয়েল বেঙ্গল টাইগার বাংলাদেশের অমূল্য সম্পদ। এ বাঘকে বিলুপ্তির হাত থেকে আমাদের বাঁচাতে
হবে।
সুন্দরবনের
অন্যান্য প্রাণী :
সুন্দরবনে বাঘ ছাড়াও আছে নানা রকমের হরিণ। কোনোটার বড় বড় শিং,
কোনোটার গায়ে ফোঁটা ফোঁটা সাদা দাগ। এদের বলে চিত্রা হরিণ। একসময়
সুন্দরবনে প্রচুর গণ্ডার ছিল, ছিল হাতি, বুনো শুয়োর। এখন এসব প্রাণী আর নেই। তবে দেশের রাঙামাটি আর বান্দরবানের
জঙ্গলে হাতি দেখতে পাওয়া যায়। এ ছাড়া রয়েছে বানর, বনবিড়াল
ও শজারু।
সুন্দরবনের
পাখি : এ বনের পাখির মধ্যে রয়েছে বক, সারস, হাড়গিলা, কাদাখোঁচা, লেনজা
ও হট্টিটি। সমুদ্র উপকূলে দেখা যায় গাঙচিল, জল কবুতর,
টার্ন, চিল, মাছরাঙা,
কাঠঠোকরা, ভগীরথ, পেঁচা, মধুপায়ী, হাড়িচাঁচা,
ইগল ও শকুন। একসময় এ বনে প্রচুর শকুন দেখা যেত। কিন্তু এখন এটি বিলুপ্তপ্রায়
পাখি।
উপসংহার
: যেকোনো দেশের জন্যই জীবজন্তু, পশুপাখি এক অমূল্য
সম্পদ। দেশের জলবায়ু, আবহাওয়া, গাছপালা
ইত্যাদি প্রাকৃতিক পরিমণ্ডলেই সে দেশের প্রাণীকূল জীবন ধারণ করে। এই পরিবেশ ধ্বংস
করলে প্রকৃতিতে নেমে আসে খরা, বন্যা, ঝড় ইত্যাদির মতো নানা বিপর্যয়। প্রকৃতিতে যদি বিপর্যয় ঘটে তবে
প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে মিলেমিশে থাকা পশুপাখির জীবন বিপন্ন হয়। এমনিতেই এ বনের
অনেক প্রাণী প্রাকৃতিক পরিবর্তন ও বিপর্যয়ের ফলে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যেসব প্রাণী
বর্তমানে আছে, তাদের বিলুপ্তির হাত থেকে আমাদের রক্ষা
করতে হবে। কারণ সুন্দরবনের সব প্রাণী আমাদের জাতীয় সম্পদ।
0 Comments