ভূমিকা: এক অসাধারণ সৌন্দর্যপটের নাম বাংলাদেশ। প্রকৃতির মায়া মমতা যার আপন বৈশিষ্ট্য। যে দেশকে বিধাতা সাজিয়েছেন তাঁর আপন মনের মাধুরী মিশিয়ে, সুচারুরূপে, বর্ণাঢ্য করে। সে দেশর নাম বাংলাদেশ। যে দেশের সৌন্দর্যের মাঝে নেই কোন কৃত্রিমতার ছোঁয়া, আছে কেবল প্রগাঢ় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমারোহ, সে দেশর নাম বাংলাদেশ। নিসর্গ যে দেশের অলংকার, প্রকৃতি যে দেশের রূপ সুষমার মূল উপকরণ, সে দেশেইতো বাংলাদেশ। অপূর্ব সৌন্দর্যে শস্য-সম্পদে আর প্রকৃতিক বৈচিত্র্যে ভরা এমন দেশ পৃথিবীতে আর একটিও নেই।
বাংলার সৌন্দর্য: গ্রাম প্রধান
দেশ আমাদের এই বাংলাদেশ। তাই বাংলার যে দিকেই তাকাই না কেন চোখে পড়ে সবুজ বনানী। কোখাও বা মাঠের
পর মাঠ আর সোনালি পাকা ধানের শোভা। কোখাও আবার
সারি সারি তাল-নারিকেল-খেজুরের বনানী, কোথাও বা সুজচ্চ
বটবৃক্ষ মৌন তপস্যায় মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে দূরদূরান্ত থেকে আগত পথিকের ছায়া
হয়ে। কোখাও বা রাখালের বাঁশির
মেঠো সুর।
ঋতুবৈচিত্র্য ও বাংলার প্রকৃতি: বাংলার
প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আবর্তিত হয় এর ঋতুবৈচিত্র্যের সাথে সাথে। ছয়টি ঋতুর এক আশ্চর্য
লীলা নিকেতন এই বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই বৈচিত্র্যে আর সৌন্দর্যে অনন্য।
গ্রীষ্ম: এখানে
গ্রীষ্ম আসে সূর্যের প্রচন্ড দাবদাহ নিয়ে। গাছে গাছে পেকে ওঠে আম, জাম, লিচু, কাঁঠাল
প্রভৃতি ফল। মাঠ-ঘাঠ-প্রান্তর, জনজীবন সবকিছুই এ সময় মেতে
ওঠে। প্রখর তাপদাহে জীবধাত্রী ধরিত্রীর বক্ষ বিধীর্ণ হয়ে যায়, চৌচির হয়ে যায় তার তৃষ্ণার্ত প্রান্তর।
বর্ষা: গ্রীষ্ম
বিদায় নেয় বর্ষার আগমনের সাথে সাথে। আষাঢ়ের জলধারা বাংলার প্রকৃতিকে দেয় চির সবুজ
করে। খাল-বিল-নদী-নালা পানিতে থৈ থৈ করে তখন। কদম্ব, যুঁথী, কেয়া।
শরত: এর পর ধীরে
ধীরে বর্ষার অবসান ঘটে এবং শরৎ তার শুভ্র জ্যোৎস্না ও পুষ্প সুষমা নিয়ে আগমন করে।
বর্ষার নিপীড়িতা ধরণী আবার পুলকিত হয়ে ওঠে। শেফালী, কামিনী আর কাশবনের
হাস্যময়ীরূপে শরৎকাল হয়ে উঠে কবির কাছে বিমূর্ত।
হেমন্ত: বাংলার
মানুষের জীবনে নব আশার সঞ্চার করে প্রকৃতিতে এবার আগমন ঘটে পাকা ধানের গন্ধে মাতাল
করা হেমন্তের। শস্যক্ষেত্র ধারণ করে এসময় হরিদ্রাবর্ণ, রাত্রিতে শিশির পড়ে ভিজিয়ে দেয় সতেজ ঘাসের ডগা।
শীত: শীতে বাংলার
প্রকৃতি পায় এক ব্যতিক্রমী সৌন্দর্য। চারদিকে সাদা কুয়াশার চাদর, ভোরে খেজুর রস পাড়ার দৃশ্য, নাড়ার আগুনে শিম
পোড়ানো এ সবের মধ্যেই আছে এক স্বতন্ত্র আনন্দ।
ঋতুরাজ বসন্ত: সবশেষে
প্রকৃতিরাজ্যে আগমন ঘটে ঋতুরাজ বসন্তের। গাছ-পালা নব পল্লবে সুশোভিত হয়ে ওঠে, ফুলে ফুলে মৌমাছির গুন গুন, গাছে গাছে কোকিলের
গান আর বাতাসে বসন্তের সেই অনবদ্য আবহ সুর, এ শুধুই অনভবের।
0 Comments